সিনেমা-টিনেমা

avatar
(Edited)
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

আসুন বাঙ্গালস, ফ্রিতে একটু জ্ঞান বিতরণ করে ধন্য করি আপনাদের। প্রচুর গায়ে লাগবে, সুতরাং নিজ দায়িত্বে এড়িয়ে যান।
আপনারা খান-ষ্টার ডোম, আর বর্তমানের গাঁজাখুরি কমার্শিয়াল মুভি পছন্দ করেন, করতেই পারেন। কিন্তু সেগুলার নেতিবাচক দিকগুলো (যেগুলার অস্তিত্ব সত্যই আছে) নিয়ে কেউ কিছু বললে, তার বিপক্ষে যে নানান ভিত্তিহীন বাগাড়ম্বর উক্তিগুলো দেন, তাতে যে আপনাদের মূর্খতা (মাফ করবেন, এর চেয়ে আর কম অফেন্ডিং কোনো শব্দ পেলাম না) কি বিচ্ছিরি ভাবে প্রকাশ করে, তা না বোঝার মতো হেঁয়ালিতে থাকাটাও খুবই বিরক্ত উদ্রেককর একটা ব্যাপার এটা জানা উচিৎ।

সবকিছুই "এসব আজগুবি জিনিস নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই" বলে এড়িয়ে যায় বটে সব সময়, কিন্তু মাঝেমধ্যে বোধহয় দু'চারটা কথা আমাদেরও বলা উচিৎ আসলে। আমাদের বলতে, এই যে, গাঁজাখুরি তত্ত্ব দেয়া তাত্ত্বিকদের উদ্দেশ্যে সঠিক প্যানেল থেকে পাল্টা মন্তব্য আশা উচিৎ।
(আমি বাপু কোনো বোদ্ধা নই, আমার স্বল্প জ্ঞান থেকে একটু চেষ্টা করলাম কেবল)

ইদানীংকালে প্রায়ই মানুষকে বলতে শুনি,

  • "সিনেমা থেকে যারা জীবনমুখী শিক্ষা অর্র্জন করতে চায়, তাদের সিনেমা দেখা ছেড়ে দেয়াই ভালো। "
  • "সিনেমা দেখে অফেন্ডেড হয়ে যাবার কিছু নেই, ওটা কেবলই একটা এন্টারটেইনমেন্ট"
  • "সিনেমা দেখে ট্রিগার হইলে সিনেমা দেখা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ"
    এবং ইত্যাদি ইত্যাদি...
    কেন?
    কারণ সিনেমা কেবলই যেটাকে বলা হয় মোটাদাগে "এন্টারটেইনমেন্ট", এবং আর কিছু নয়!
    অরে বাপু, সিনেমা নিজেইতো একটা "শিল্প"
    শিল্পের একটা গোটা অংশ কিভাবে সস্তা-সাময়িক আনন্দ হয়ে যায়?
    কিভাবে এর চর্চাকে একেবারেই বাতিল আর অপ্রয়োজনীয় বলে আখ্যায়িত করে কেউ?

একটা সময় ছিল, আমাদের দেশে, আমাদের প্রতিবেশী (ভারত, যে দেশের সিনেমাই মূলতঃ আমরা বেশি দেখে বড় হয়েছি, নিজের দেশের আগে) দেশে অসাধারণ এক সিনেমা যুগ ছিল।
তাছাড়া আমাদের জাতীয় পর্যায়ের যতোগুলো আন্দোলন আর দাবি আদায়ের দায় এসেছিলো, সবগুলাতেই আমাদের সিনেমার সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নিজেই একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে!

IMG_20231213_205657.jpg
Source
এদেশের জহির রায়হান, আব্দুল জব্বার খান, সিনেমাগুলো এখনো আমাদের কাছে চর্চিত, চর্চিত সত্যজিৎ (বিশ্বজুড়ে এমনকি), মৃনাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, বা নিমাই ঘোষরা ঠিক কি সিনেমা বানিয়েছেন আর কেনই বা বানিয়েছেন সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।

পরবর্তীতে এসে পরমব্রত, অনিন্দ, ঋত্বিকরা যে খানিকটা পরিবর্তন আনলো, এখন চরকিতে যে চেষ্টা চলে বাংলাদেশী প্রচালক, অভিনেতা/অভিনেত্রীদের, কি মনে হয় এসবই বা কেন, সিনেমার উদ্দেশ্য যদি কেবলই।

যেকোনো বৈপ্লবিক সাজ, সমাজের গোঁড়া ধারা, বা যেকোনো ধরণের বড় পরিসরের পরিবর্তনের সূচনার গল্প কিন্তু সবার আগে সিনেমাতেই আসে। যুদ্ধ, বিদ্বেষ, সংস্কার, প্যাট্রিয়ার্কি, ফেমিনিজম, সামাজিক বিদ্রোহ, ধর্ষণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক সচেতনতা এবং এরকম আরো শয়ে শয়ে ইস্যু আছে, যেগুলা শুধু সিনেমাতে আসেইনি, বরং প্রেক্ষাপটটির উপর আমূল প্রভাবও ফেলেছে, অন্তত তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও, পরোক্ষভাবে ফেলেছে, এবং একেবারেই প্রভাব না ফেলতে পারলে, মানুষকে অন্তত জানিয়েছে।
জানিয়েছে যে, এরকম একটা কিছু হচ্ছে, যেটা হওয়া উচিৎ না, কিংবা এরকম কিছু হচ্ছেনা, যেটা হওয়া উচিৎ।

সিনেমার নায়ক নায়িকাদের, উঠতি বয়সের তরুণ/তরুণীরা আদর্শ মনে করে। আমরা আদিম প্রবৃত্তি থেকেই খুবই ডাইভার্স আবেগ ধারণ করা একটা জাতি। উন্নত বুদ্ধিমত্তা আমাদের থাকলেও, সেটার চর্চাতে যে আমরা প্রবলভাবে ব্যর্থ তার উদাহরণ প্রতিদিন না, প্রায় প্রতি মিনিটে কোথাও না কোথাও আমাদের কেউ ছাপ রেখে যাচ্ছে প্রতি নিয়ত।
অথচ আমাদের এই বিবেকের সাথে আবেগের সামঞ্জজস্যতার সমন্বয় করবার সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা কোথাও নেই।
বর্তমানে মানুষ প্রচুর সিনেমা, নাটক দেখার অভ্যেস গড়ে তুলেছে। সবাই ওপেন-রিলেশনশিপের মতো, সস্তা বিনোদন পছন্দ সিনেমা, নাটকেও।

একটা সিনেমায় টক্সিক-রিলেশনশিপকে রোমান্টিসাইজ করা হচ্ছে, মানুষ তাতেই খুবই আবেগিত হয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা ফ্যান্টাসিতে থাকছে করিম সিঙের বা রহিমের মতো একটা প্রেমিক লাগবে, ছেলেরা সেরকম প্রেমিক হতে চাইছে।
আর ঠিক সেই জায়গা থেকেই, একটু চিন্তা করে দেখুন, একটা প্রজন্ম এসব জেনে বড় হচ্ছে, তারউপর এমন এক শিক্ষা আর সমাজব্যবস্থায় যেখানে এগুলো নিয়ে এখনো সঠিক প্রবর্তিত স্কুলিং হয়না, না ঘরে, না বাইরে।

আপনারা বলেন, সিনেমা থেকে কেউ শিখেনা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই কথা বলি।
ফেমিনিজম, প্যাট্রিয়ার্কি, মিসোজিনি, ম্যারিটাল রেপ, ট্রান্সজেন্ডার, queer/LGBTQ, এবং এ জাতীয় আরো নানান ধরণের বিষয়বস্তু এখন প্রায় সর্বজন বিদিত।
আপনার কি মনে হয়, এগুলার শিক্ষা পাঠ্য বই থেকে পাচ্ছে, স্কুল/কলেজের সচেতন শিক্ষক বা শিক্ষা শেখাচ্ছে, ঘরে শেখাচ্ছে?
কোনোটাই না।
বই মানুষ এখন খুব একটা পড়ে না।
পড়ে স্যোশাল মিডিয়া পোস্ট, আর দেখে সিনেমা থেকে।
জানে ওখান থেকেই।

ইদানীং মানুষ প্রচুর আলসে হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, বিশেষত চিন্তায়, ভাবনায়। তারা ভাবতে নারাজ, গছিয়ে দেয়া হুজুগে নাচতেই তারা স্বাছ্যন্দবোধ করে, কারণ অতো চিন্তা-ভাবনার ইচ্ছে করে না, কোনো বিষয় খতিয়ে দেখার বা ভাবার তাড়না নেই।
দুটো মীম দেখা, তিনটে রিল দেখা, আর কিছু কাদা ছোঁড়াছুড়ি এখানে সেখানে যেয়ে।
ব্যাস!
যা সামনে দেয়া হয়, তাই খায়।
এটাই ৯০% বা তারও বেশী মানুষের সংখ্যা। সুতরাং যদি বলা হয়, "নিজ দায়িত্বে বুঝে নিক/ জেনে নিক" এটা বিশাল ভুল হবে।
কেউ সেটা করতে যাবেনা।
তারউপর এইসব গাঁজাখুরি, বস্তাপচা কমার্শিয়াল ব্লকবাস্টারের অডিয়েন্স থাকে টিনেজ থেকে শুরু করে মিড্-টুয়েন্টির ছেলে-মেয়েরা।
যেখানে আমরা ম্যাচিউর ইন্ডিভিজুয়ালরা এরকম উদাসী, গন্ডমূর্খের দোলে পরিণত হয়েছি, সেখানে সেইসব বয়সের কাছ থেকে রাস্তা না দেখায়েই, তার পুলসিরাত পারি দিয়ে ফেলবে আশা রাখাটার আস্পর্ধা কোথা থেকে আসে?

স্ট্রং মেন্'দের দ্বারা উইক সোসাইটি তৈরী হয়ে গেছে।
সুতরাং প্লিজ, আপনি বিনোদনের জন্য দেখছেন, দেখেন, কিন্তু এসব গার্বেজ গুয়ের দলাকে সিনেমাকে বলা সেটাকে আবার কেউ বিরুদ্ধাচরণ করলে জাস্টিফাই করতে চেয়ে আরো গাঁজাখুরি যুক্তি ফেঁদে বসা....
সিরিয়াসলি!!?



0
0
0.000
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
2 comments
avatar

সিনেমা যা হয় দেশে বিদেশে তার থেকে অল্প কয়টা দেশীয় শিল্প সংস্কৃতি ধরে রেখে করা হয়, বাকিগুলো সস্তা আবেগের ওপর।
এখন কারা মূর্খ কারা তা নয়, সেটা বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতার প্রশ্ন, জ্ঞানী লোকের কদর মূর্খদের বিরাজমানতার কারনেই ধরা পড়ে।
আমি সময় পেলে অভিরুচি বিবেচনায় সিনেমা দেখি, অতশত তত্ত্ব বুঝি না, বুঝেই বা কি করবো, মূর্খদের দেশে মূর্খরাই কর্তা, তা বুঝতো হলে বেশিদূর যেতে হয় না।

সমালোচনা করতে করতে মুখে আর রা নেই নেই অবস্থা, অবস্থাটা যে কেমন সেটা বোঝাতে পারবো না, তবে রবীর একটি কথার মতো হবে তা হলো -
শেষে রা হতে হতে নেই নেই হয়ে যাবে।
আমি তেমনই আছি, ভালো লাগলে সিনেমা দেখি, ভালো না লাগলে কানে তুলো গুঁজে একলা চলি।

জীবনের পথে পথে উট চলছে চলছে চলছে...

avatar

হ্যাঁ, অই "ধুর সব রসাতলে চলে গেছে" বলে এড়িয়ে চলছেই, চলছিই বটে আমরা সবাই, কিন্তু তবুও মাঝেমধ্যেই এইটা কমিউনিটির অংশ হিসাবে দায়িত্ব আমাদের, জবাবদিহিতা রাখা প্রয়োজন।

সবসময় ইগনোরেন্সে থাকাটা কখনোই সমাধান নয়। এটা করা সহজ বলে সবাই তাই করছি বটে, তবে পরিস্থিতি নিয়ে কাজ না করলেও অন্তত কথা বলা জরুরি।